খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ মাঘ, ১৪৩১ | ২২ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  ড্রাম ট্রাকের চাপায় নগরীতে মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু

আগে গণহত্যার বিচার, পরে আ.লীগের নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রশ্ন : শ‌ফিকুর রহমান

গেজেট ডেস্ক

আগে জুলাই আগস্টে গণহত্যার বিচার হোক তারপর আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রশ্ন এ মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, তারা একটি খুনের সিন্ডিকেট চক্র। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বরিশাল হেমায়েত উদ্দিন ঈদগাহ ময়দানে বরিশাল মহানগর ও জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, আমরা চাই গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার হোক, তাদের দলের বিচার হোক। শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা তো নিজেদের দেশপ্রেমিক দাবি করেন; তো দেশপ্রেমিক হলে আসেন না। বিচার মোকাবেলা করুন। আমাদের নেতাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দিয়েছেন। আপনারা তো প্রকাশ্যে গণহত্যা চালিয়েছেন। আওয়ামী লীগের হাতে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে জামায়াতে ইসলামী উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার চারদিন পর তারা নিজেরাই নিষিদ্ধ হয়েছে।

দলটির প্রধান বলেন, স্বাধীনতার পর থকে বিভেদ তৈরি করে দেশটাকে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। যুদ্ধ ক্ষেত্রে অনেকেই জীবন দেয়। কিন্তু এভাবে বুক পেতে জীবন দেয়া আবু সাঈদের ঘটনা বিরল। আবু সাঈদ মুক্তির মহানায়ক। জুলাই-আগস্টে শহীদরা যে জন্য জীবন দিয়েছে সেই লড়াইটা আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু হয়ে বেঁচে আছেন; তারা এখন জিন্দা শহীদ।

তিনি বলেন, ভোলার গ্যাস সারাদেশে যাক; তবে সবার আগে বরিশালে আসুক। আর একটি সেতু বরিশাল থেকে ভোলায় যাক। ভোলাসহ পুরো বরিশাল বিভাগকে উন্নত দেখতে চাই। আমাদের যদি আল্লাহ সুযোগ দেন তাহলে বরিশালবাসীর সকল দাবি পূরণের চেষ্টা করবো। আর যদি বিরোধী আসনেও থাকি তবে আপনাদের দাবিগুলো তুলে ধরবো।

কর্মী সম্মেলনের সভাপতি বরিশাল মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, ঈদগাঁ মাঠে যাতে সম্মেলন হতে না পারে তার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। সকল বাঁধা উপেক্ষা করে অনুষ্ঠান সফল করতে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি। তিনি বিগত সময়ে বাতিল হওয়া সকল প্রকল্পসমূহ চালু করার দাবি জানান।

সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার ইসলাম নির্মূল করার উদ্দেশ্যে সাবেক আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াতের নেতাদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে। তারপরও জামায়াত নেতারা পালিয়ে যায়নি।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদীরা এখনো চক্রান্ত করছে। আর কোনো ফ্যাসিবাদকে এ দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেয়া হবে না। প্রশাসন ও সরকারি দপ্তরসমূহে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ভোটার তালিকা সঠিকভাবে তৈরি করতে হবে।

সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, বিভেদ নয়, ঐক্য ধরে রাখতে হবে। জনমত তৈরি করে ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করতে হবে। আগামী নির্বাচন ফেয়ার পদ্ধতিতে হতে হবে। যারা পালিয়ে গেছে তারা ছাড়া এ বিষয়ে দেশের সব দল এক মত হয়েছে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল বলেন, ফ্যাসিস্টরা পালিয়ে গেছে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে ডাঃ শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে এগিয়ে যেতে হবে। সেই বাংলাদেশ গড়তে জানমাল দিয়ে পাশে থাকার আহবান জানান তিনি।

সকল বিভেদ ভুলে ঐক্যের রাজনীতি শুরু করার আহবান জানান ঢাকা মহানগর নায়েবে আমীর মনজুরুল ইসলাম ভূইয়া।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, বরিশাল থেকে নতুন করে ইসলামী আন্দোলন শুরু হয়ে তা দেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইল ছড়িয়ে যাবে। নতুন এই বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, যারা ত্যাগের রাজনীতি করে তাদের দেশ ত্যাগ করতে হয় না। আর যারা ভোগের রাজনীতি করে তারা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

স্বাগত বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও বরিশাল জেলা আমীর অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার বলেন, পালিয়ে যাওয়া সরকার মনে করেছিল হত্যা করে, জেলে দিয়ে, খুন করে, ফাঁসি দিয়ে আর আয়না ঘর দিয়ে ইসলামী আন্দোলন দমন করা যাবে। এতোকিছু করেও তা সম্ভব হয়নি। তারা ভুলে গিয়েছিল এই জমিন এই দেশ আল্লাহর। যারা ১৭ বছর অত্যাচার নির্যাতন করেছে তারা পালিয়ে গেছে। এ দেশের মানুষ নিশ্চয়তা চায়, যাতে দেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি ক্ষমতায় না আসে।

বৈষম্য বিরোধী আনদোলনে শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর বাবা জাকির হোসেন বলেন, আমাদের সন্তানেরা যে ইচ্ছা নিয়ে শহীদ হয়েছে, সেই ইচ্ছা পূরণ করতে হবে। তাদের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার আহবান জানান তিনি।

সনাতনী ধর্মের মানুষের পক্ষে বক্তব্য দেন অসিম কুমার হালদার। তিনি বলেন, এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় বেশি কিছু চায় না, তারা চায় শুধু শান্তি। ৫ আগষ্টের পর আমার এলাকায় হিন্দুদের ওপর কোনো হামলা হয়নি। আমাদের খোঁজ রেখেছেন জামায়াতের আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান। এছাড়া তেমন কাউকে পাইনি। আমরা শান্তি চাই, আমরা কারো কাছে মাথা বিক্রি করবো না।

এছাড়াও বক্তব্য দেন জামায়াতের ওলামা বিভাগের সেক্রেটারি মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, জমায়াতে ইসলামীর ঢাকা জেলা আমীর মাওলানা দেলোয়ার, বরগুনা জেলা আমীর মাওলানা মহিববুল্লাহ হারুন, পটুয়াখালী জেলা আমীর এডভোকেট নাজমুল আহসান, ভোলা জেলা আমীর মাস্টার জাকির হোসাইন, ঝালকাঠি জেলা আমীর এডভোকেট হাবিবুর রহমান, পিরোজপুর জেলা আমীর অধ্যক্ষ তোফাজ্জল হোসাইন ফরিদ, বরিশাল মহানগর ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি কামরুল আহসান হাসান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের বরিশাল অঞ্চল পরিচালক কবির আহমেদ, শিবিরের বরিশাল মহানগর সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম, জেলা সভাপতি আকবর হোসেন, ব্যবসায়ী নেতা সগির বিন সাঈদ প্রমুখ।

খুলনা গেজেট/ টিএ




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!